প্রস্তাবনা
উত্তরবঙ্গের বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা প্রতি বছরই অঞ্চলটিকে প্রভাবিত করে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই বন্যার জন্য ভুটান ও সিকিমকে দায়ী করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রতিবেশী দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তরবঙ্গের নদীগুলোর বৃদ্ধি এবং অতিবৃষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। মমতা ব্যানার্জির দাবি, তারা নিজের দেশের পর্যবেক্ষণের অভাব এবং পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন, যার ফলে এই দুর্যোগের প্রকোপ বেড়েছে।
উত্তরবঙ্গের বন্যার পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের দেশের পরিবেশ ও আঞ্চলিক জলবায়ুকে বিপর্যস্ত করছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে ভারি বর্ষণের পরিমাণ এবং নদীগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তনগুলি, যেমন অম্ল বৃষ্টি ও তাপমাত্রার অস্বাভাবিক পরিবর্তন, এ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রভাব ফেলছে।
এছাড়াও, সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য। যাওয়া আসার ব্যবস্থা সঠিকভাবে না হওয়ায় এবং জলাশয়গুলোর যথাযথ যত্ন না নিলে, বন্যার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখে, এটি স্পষ্ট যে উত্তরের জনগণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাস
উত্তরবঙ্গের ভূগোল ও জলবায়ু প্রকৃতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরণের প্রভাব ফেলেছে। এই অঞ্চলের বিস্তৃত নদী, পাহাড় ও সংস্কৃতির কারণে, জনজীবনে প্রায়শই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে, বৃষ্টি, প্রবল বন্যা, ভূমিধস এবং ভূমিকম্প উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা। আঞ্চলিক নৃতত্ত্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, পদার্থবিজ্ঞানে অনাক্রম্য অবস্থান তাদের দীর্ঘস্থায়ী বিপদের মধ্যে ফেলেছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে ১৯৯১ সালের বন্যা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ওই বছর, প্রবল বর্ষণে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করেছিল। এই ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং লক্ষ লক্ষ পশু ও সম্পদ নষ্ট হয়। এছাড়াও, ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত ভূমিধসের ঘটনাবলী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনা সৃষ্টি করে। পাহাড়ি অঞ্চলে অতি বৃষ্টির ফলে ভূমিধসের ফলে কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে নিঃশংস হয়ে যায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতিক্রিয়া সাধারণত একাধিক দিক থেকে বেরিয়ে আসে। স্থানীয় বাসিন্দারা সাধারণত সুরক্ষা, সরকারি সহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করা শুরু করেন। দুর্যোগের সময় স্থানীয় ট্রাস্ট এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এ অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তবে আবার অনেক সময় পুণর্বাসন সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নিজেদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশা সৃষ্টি করে। এমনকি বিভিন্ন দুর্যোগের পরে সেচ কার্যক্রম এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে নানা সমালোচনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
ম্যান মেড বন্যার ধারণা
ম্যান মেড বন্যা একটি জটিল পরিবেশগত ঘটনাকে বোঝায়, যা মূলত মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক বদলের তুলনায়, মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড যেমন বনভূমি ব্যালেন্স নষ্ট করা, নদীর প্রবাহ পরিবর্তন করা, এবং অব্যবস্থাপনা কিছু সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ধরনের বন্যার প্রবণতা বাড়ায়। এই সমস্যাগুলোর কারণে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের উপর খারাপ প্রভাব তৈরি হয়।
বিভিন্ন দেশে, ম্যান মেড বন্যার ঘটনাগুলো স্থায়ী নীরবতার দ্বারা অবলোকনযোগ্য। মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং বরফ গলা জল চলাকালীন অবস্থায়, বর্ষার সময়, মানুষের দ্বারা নির্মিত বাঁধ এবং অন্যান্য অবকাঠামো স্থাপন করে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু প্রায়শই এটি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করে ও সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যয় ঘটায়। যেমন গাছের নষ্টকরণ এবং অতিরিক্ত নির্মাণ অভিযানের মাধ্যমে জল নিষ্কাশনের পথ সঙ্কুচিত হয়। ফলে, যখন বৃষ্টি হয়, তখন জল নিস্কাশন না হবার কারণে ক্ষেত্রগুলোতে জল জমে যায়, যা ম্যান মেড বন্যার সৃষ্টি করে।
এছাড়া, কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া শিল্প এবং নির্মাণ প্রকল্প বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি করে, যা কখনো কখনো ম্যান মেড বন্যার কারণ হতে পারে। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার প্রভাবিত হওয়া এবং খামারবাসীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে, মানুষদের মধ্যে এই ধরনের বন্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, আমাদের পরিকল্পিত কৃষি এবং নগর উন্নয়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য
বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে ‘ম্যান মেড বন্যা’র কারণে বিপর্যয়ের জন্য প্রতিবেশী দেশ ভুটান এবং ভারতের সিকিম রাজ্যকে উল্লেখ করেছেন। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, উপরোক্ত দেশের гид্রোলজিকাল প্রক্রিয়া ও জলবিদ্যুতের প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ার ফলেই এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, এই প্রকল্পগুলোর অব্যবস্থাপনা এবং অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন একটি নতুন ধরনের বন্যার সৃষ্টি করেছে, যা সাধারণ নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করছে।
মমতা ব্যানার্জি আরও বলেন, সিকিম এবং ভুটানের বন্যার পানি মুক্তির ফলে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলোর প্রবাহ বিপর্যস্ত হয়েছে। এই সমস্যা শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের ফল নয়, বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অভাবও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সমন্বিত উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনা না হলে এই পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব নয়।
এছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন যে, ভারতীয় সরকার এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে অন্ধকারে রয়েছে। তিনি স্থানীয় সংস্থাগুলোর সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, উক্ত সমস্যা সমাধানে বৈঠক ও আলোচনা আরো কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে সঠিক নীতিমালা তৈরী করতে এবং উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করে বৈষম্য নিরসনে সক্ষম হবে।
ভুটান ও সিকিমের ভূমিকা
ভুটান ও সিকিম, দুইটি প্রতিবেশী দেশ, উত্তরবঙ্গের জলবায়ু এবং ভূগোলের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। ভুটানের ভূখণ্ড অত্যন্ত পার্বত্য, যেখানে উচ্চ পর্বত শৃঙ্গে বর্ষাকাল ও তুষারপাতের কারণে জলপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এই জলপ্রবাহ প্রায়শই হুমকি সৃষ্টি করে, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের নিম্নবর্তী অঞ্চলে। সত্বেও, ভুটান সরকারের একাধিক বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা এই অঞ্চলে সংরক্ষিত জলপ্রবাহের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
অন্যদিকে, সিকিমের ভূগোলও এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিকিমের উচ্চ প্রান্তগুলি থেকে যে বরফ ও বর্ষার পানি প্রবাহিত হয়, তা উত্তরবঙ্গের নদ নদীতে প্রবাহের গতিবিধিতে পরিবর্তন আনতে পারে। সিকিমের ঢালু অঞ্চলগুলির কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধস ও অতি প্রবাহ ঘটলে তা সরাসরি উত্তরবঙ্গের বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই দুই দেশের ভূগোলিক অবস্থান এবং জলবায়ুসের ব্যাপক পরিবর্তন উত্তরবঙ্গের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে বৈষম্যমূলক করে তুলছে।
এছাড়া, ভুটান এবং সিকিমের পানির ব্যবস্থাপনার নীতি, যা ন্যূনতম বিজ্ঞানসম্মত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া পরিচালিত হয়, তা উত্তরবঙ্গে বন্যার জন্য ক্রমাগত সমস্যার সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে, নদী প্রবাহের উপর নজরদারি ও ব্যবস্থাপনা না থাকলে আঞ্চলিক ভাবনায় ভারসাম্য নিশ্চিত করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই ভুটান ও সিকিমের পানিবিজ্ঞান এবং ভূগোল, উত্তরবঙ্গের বন্যার প্রাসঙ্গিকতার সাথে সরাসরি সংযুক্ত।
বন্যার প্রভাব: স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রা
উত্তরবঙ্গের মমতার ব্যানার্জি দ্বারা সভানেত্রী হয়ে পরিচালিত এলাকায়, যে ম্যান মেড বন্যার কারণে স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তনের স্রোত বয়ে যাচ্ছে, তা চরম উৎকর্ষে। শিল্প ও কৃষিতে সমৃদ্ধ এ অঞ্চলটি, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতি মানুষের মনকে আকৃষ্ট করে, এখন বন্যার অভিঘাতে একেবারে বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণের জীবিকা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
বন্যার ফলে কৃষি কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়ছে। এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য এটি একটি গুরুতর দুঃখের বিষয়, কারণ তারা মৌসুমি ফসল উৎপাদন করে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের ধান, সবজি এবং ফলমূলের আবাদ করে এই বাঙালি কৃষকরা তাদের সংসার চালান। কিন্তু চলতি মৌসুমে বন্যার কারণে ফসল বীজতে এবং ক্ষেতে জলায়িত হয়ে মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। সেইসঙ্গে, স্থানীয় বাজারে ফল এবং সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
সামাজিক কাঠামোর দিক থেকেও এর প্রভাব সুস্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে বন্যা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং প্রতি-প্রতিক্রিয়া মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। এই বন্যার কারণে এলাকার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সংহতি হুমকির সম্মুখীন। স্থানীয় জনগণের মধ্যে অস্থিরতা, চিন্তা, এবং মানসিক চাপের কারণে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা আরও দুরূহ হয়ে পড়ছে। ফলে, প্রয়োজনীয় খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবা এবং শিক্ষার সামর্থ্য হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি সবার জন্য একটি অন্ধকার সময় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যার ফলে উত্তরবঙ্গের ভূতাত্ত্বিক ও সামাজিক চিত্রে এক বৃহৎ পরিবর্তনের ছাপ পড়বে।
সেটিং স্টেপস এন্ড প্ল্যানস
উত্তরবঙ্গের চলমান বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই সকল পদক্ষেপের মধ্যে প্রাথমিকভাবে অন্যতম হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ তহবিল সৃষ্টি। সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যে ত্রাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কাছে খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। সরকার কর্তৃক চালু করা এই ত্রাণ কর্মসূচি অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য তাত্ক্ষণিক সহায়তার ব্যবস্থা করছে।
এছাড়াও, উত্তরবঙ্গের বন্যা ব্যবস্থাপনার জন্য যে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে, তা হলো নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা। এই বাঁধগুলি বন্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে আরও কোন মারাত্মক বন্যার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। নদীর প্রবাহ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে; সেক্ষেত্রে বাঁধগুলির স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গভীর স্তরের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে এবং বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যাতে নতুন প্রজন্ম ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তুতি নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে আসতে পারে।
অন্যদিকে, সরকারের তরফ থেকে ভবিষ্যতে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যা উত্তরবঙ্গের সার্বিক বন্যা ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। সরকার জনগণের প্রতি স্বচ্ছতা বজায় রেখে তাদের সঙ্গে এই পরিকল্পনা শেয়ার করবে, যাতে সকল স্টেকহোল্ডাররা এই পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
মমতা ব্যানার্জি সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের ‘ম্যান মেড বন্যা’ নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন, তা আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শুধুমাত্র ভূটান ও সিকিমকে দায়ী করা সম্ভব নয়। তাঁদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তরবঙ্গে অতিমাত্রায় বৃষ্টি এবং নদীগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে, যা বন্যার মূল কারণ। এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা ও পূর্বাভাস এতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেমনটি মমতা ব্যানার্জি উল্লেখ করেছেন, ভূটান ও সিকিমে জল সংরক্ষণ প্রকল্প এবং অযৌক্তিক ঘোষণা যেন বন্যার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির জন্য জল সঞ্চালন এবং বাঁধের নির্মাণও বন্যার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই ধরনের প্রকল্পগুলো পরিবেশ ও স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এর ফলে যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তা দীর্ঘমেয়াদে উত্তরবঙ্গের জলবায়ু পরিস্থিতির মারাত্মক বিপর্যয় হতে পারে।
অন্য দিকে, বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেছেন যে, প্রশাসনিক ত্রুটি এবং অবহেলা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। উন্নত সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তির ব্যবহার, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়তা করবে। আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে তাপমাত্রা ও বৃষ্টির পরিবর্তনগুলোর উপর নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়ে গবেষণা আরও চলমান এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
উপসংহার
উত্তরবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যে ‘ম্যান মেড বন্যা’ প্রসঙ্গে নানা রাজনৈতিক ও ভূগোলগত দিক আলোচনা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল যে ভুটান ও সিকিমের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বন্যা সৃষ্টি হয়েছে, যা একটি নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মমতা ব্যানার্জি উল্লেখ করেছেন যে, প্রতিবেশী এই দুই দেশের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং তাদের অপারেশনাল পদ্ধতি সরাসরি উত্তরবঙ্গের কৃষি ও জনগণের জীবনে প্রভাব ফেলছে। এই মন্তব্যগুলি ভারত-বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন দ্বন্দ্ব তৈরি করে।
মমতা ব্যানার্জি সুনিশ্চিত করেছেন যে, রাজ্য সরকার এই সঙ্কট মোকাবিলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, তবে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকা ও দায়িত্বও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বন্যার মোকাবেলা করার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তা নিশ্চিত করা উচিত সেগুলি শুধুমাত্র রাজ্যের সরকারের একার দায়িত্ব নয়। এর ফলে, রাজনৈতিক সমালোচনা এবং আলোচনা তাত্ত্বিকভাবে ভারতের কৃষি, পরিবেশ এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের দিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে।
এই সঙ্কটের সময়জনিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বারবার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উত্তরবঙ্গের জনগণের আশা এবং আতঙ্ককে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে বোঝা প্রয়োজন। পাশাপাশি, এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে সরকারের উদ্যোগের কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যদ্বাণী বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। সুতরাং, আগামী দিনের জন্য কিভাবে সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।